সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার ধানকোনিয়া হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধিনে থাকা ৬ নম্বর উপ-প্রকল্পের বাঁধ মেরামত কাজে ১০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেখানে মাত্র ১ লাখ টাকার মাটি কেটেই বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে প্রকল্প সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার ধানকোনিয়া হাওরের উপ-প্রকল্পের নামে এখানে উঁচু কান্দার উপর পুরাতন বাঁধের মাটি এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে খুঁড়ে তা সমান করে রাখাসহ অপ্রয়োজনীয় এ বাঁধটিতে নামেমাত্র মাটি কেটে বরাদ্দের সব টাকাই আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
এছাড়াও প্রত্যেকটি প্রকল্পের সভাপতিদের সাথে কাজের চুক্তিপত্র সম্পাদনের খরচ বাবদ ২-৩ হাজার টাকা, সাইনবোর্ড স্থাপনের জন্য ২ হাজার টাকা ও প্রকল্প সভাপতিদেরকে চেক প্রদানের সময় তাদের কাছ থেকে আরো ২ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও পাউবোর উপ সহকারি প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে পিআইসিদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলার আটটি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামতে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউিবো) অধীনে স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১৭০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়। এর বিপরীতে পাউবো এবার ৩৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। উক্ত প্রকল্পের কাজ গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে তা চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও পিআইসি কমিটি যথাসময়ে বাঁধের কাজ শেষ করতে না পারায় পাউবো থেকে বাঁধ মেরামত কাজে আরো দুই দফায় সময়ও বাড়ানো হয়। কিন্তু অনেক পিআইসিরাই পুরাতন বাঁধের মাটি এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে খুঁড়ে তা কম্পেশন করে বাঁধের দুই পাশে নামেমাত্র দূর্বাঘাস লাগিয়ে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে এ পর্যন্ত বরাদ্দের প্রায় ৬০ শতাংশ টাকা ছাড় করে নিয়েছে বলেও জানা গেছে।
এছাড়াও প্রত্যেকটি প্রকল্প এলাকায় সরকারি খরচে সাইনবোর্ড স্থাপনের কথা থাকলেও ওইসব প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ পাউবো’র উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন প্রত্যেক প্রকল্প সভাপতির কাছ থেকে সাইনবোর্ড বাবদ ২ হাজার টাকা করে ও কাজের চেক প্রদানের সময় তাদের কাছ থেকে প্রত্যেকবারই আরো ২ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পিআইসি জানান।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার ধানকোনিয়া হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ৬ নম্বর উপ-প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১ কিলোমিটার উঁচু কান্দার উপর পুরাতন একটি বাঁধ রয়েছে। ওই অপ্রয়োজনীয় বাঁধটিতেই এবার উপ প্রকল্পের নামে ১০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় পাউবো। আর উক্ত প্রকল্পের সভাপতি করা হয় উপজেলার সুখাইড়-রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য সালমা আক্তারের স্বামী সিদ্দিক মিয়াকে। প্রকল্প সভাপতি ওই বাঁধে থাকা একটি ছোট ভাঙাস্থান মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচ করে তা তিনি ভরাট করেছেন। এছাড়াও তিনি বাঁধের কিছু কিছু স্থানে নামেমাত্র মাটি কাটলেও উঁচু সবটুকু পুরাতন বাঁধের মাটি এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে খুঁড়ে তা কম্পেকশন করে দুই পাশে দূর্বাঘাস লাগিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকার মতো খরচ করে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে স্থানীয় কৃষকরা জানান।
উপজেলার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক মো. ইসহাক মিয়া বলেন, ‘ধানকোনিয়া হাওরের এ বাঁধটি সম্পূর্ণ ঝুঁকি মুক্ত ও নিরাপদ হওয়া সত্ত্বেও এখানে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প দেখিয়ে লাখ টাকার কাজ করে প্রকল্পের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। শুধু তাই নয় পাউবো এ বাঁধটির মতো এ উপজেলার বিভিন্ন হাওরের অপ্রয়োজনীয় আরো অনেক প্রকল্প দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাটের পাঁয়তারা করছে’। একই সুরে কথা বলেন, ধানকোনিয়া হাওর পাড়ের কৃষক রতন মিয়া, কাজল মিয়া, বুলবুল মিয়াসহ আরো অনেকেই।
ধানকোনিয়া হাওরের ৬ নম্বর উপ-প্রকল্পের সভাপতি সিদ্দিক মিয়া বাঁধ মেরামত কাজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ‘এ বাঁধ মেরামত কাজে আমি প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা মাটি কাটা বাবদ খরচ করেছি। আর এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কম্পেকশন ও বাঁধের দুই পাশে দূর্বাঘাস লাগানো বাবদ আরো প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো খরচ করেছি’।
এবিষয়ে সুনামগঞ্জ পাউবো’র উপসহকারি প্রকৌশলী ও উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. ইমরান হোসেন বলেন, প্রাক্কলন অনুযায়ী সবকটি প্রকল্পেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং পিআইসিদেরকে কাজ দেখেই বিল প্রদান করা হয়েছে। তবে পিআইসিদের সাথে কাজের চুক্তিপত্র, সাইনবোর্ড ও কাজের বিল প্রদান বাবত আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি এবং এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. মুনতাসির হাসান বলেন, এ পর্যন্ত সবকটি প্রকল্পের পিআইসিদেরকে কাজের মাত্র ৫৯ শতাংশ বিল দেওয়া হয়েছে। কাজের বাকি বিল সঠিকভাবে যাচাই-বাচাই করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে বলে দিয়েছি।
Leave a Reply